কুরআন আকাশের প্রতিচ্ছবিতে পূর্ন। বিশেষভাবে সৃষ্টির বর্ণনা দেয় এমন আয়াতগুলি ছাড়াও কুরআনে মোটামুটি আরও চল্লিশটি আয়াত রয়েছে যা ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। তার পরিপূরক জ্যোতিবিদ্যা সম্পর্কিত তথ্য প্রদান করে। তাদের মধ্যে কিছু স্রষ্টার মহিমার প্রতিফলনের চেয়ে বেশি কিছু নয়, সমস্ত নক্ষত্র ও গ্রহ ব্যবস্থার সংগঠক। জ্যোতিবিদ্যা সম্পর্কে আল কোরআন থেকে অনেক ব্যাখা পাওয়া যায়। এখানে কয়েকটা ব্যাখা দেওয়া হবে।
কাফেরা কি দেখেনা যে আসমান জমিনের মুখ বন্ধ ছিল। অতঃপর আমি এ দুটিকে বিস্ফোরিত করেছি । আর আমি পানি দ্বারা সকল প্রাণী জাত সৃষ্টি করেছি। ওরা কি ঈমান আনবে না ?
সুরা আম্বিয়া : ৩০
تفكر ساعة خير من عباده ستيت منه
এক ঘন্টা আল্লাহর যে কোনো রহস্য, নিয়ে চিন্তা গবেষণা করা ষাট বছরের -এবাদাতের চেয়েও উত্তম (হাদিস)
পৃথিবী সৃষ্টিতে বিভিন্ন মতবাদ
প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক (৬২৪-৫৪৫)BC এর মতে, সমস্ত বিশ্ব একটি মাত্র উপাদান দ্বারা গঠিত। তার ভাষায় “ সফল তুকুই পানি ”।
আমরা পৃথিবী নামের গ্রহে বাস করি। এটি সূর্য নামের একটি নক্ষত্রের গ্রহ এই সূর্য -তার ও তার নয়টি গ্রহ , এই সূর্য ও তার ৯ টি গ্রহ গ্রহ – নীহারিকা , ধুমকেতু , কৃষ্ণরামন , কৃষ্ণগহ্বর ইত্যাদি নিয়ে যে জগত গঠিত তাকে সৌর গ্রহ বলে। প্রতিটি গ্রহের আবার এক বা একাধিক উপগ্রহ থাকতে পারে। যেমনঃ পৃথিবীর নামের গ্রহের একটি মাত্র উপগ্রহ তা হলো চাঁদ ।
এই নক্ষত্রগুলো মহাবিশ্বে গুচ্ছ বা দলবদ্ধ হয়ে থাকে। এসব গুচ্ছ দলকে একত্রে গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ বলা হয় । এই মহাবিশ্বে ছায়াপথের সংখ্যা প্রায় ১০০ বিলিয়ন বা (এক হাজার কোটি )।
সূর্য যে ছায়াপথে রয়েছে তাকে বলা হয় মিল্কিওয়ে বা আকাশ গঙ্গা । এই ছায়াপথে প্রায় 100 বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে।
নক্ষত্রের সৃষ্টি যেভাবে
বিজ্ঞানের মতে ছায়াপথের অতি ঘন গ্যাসীয় ও ধূলি মেঘের মহাকর্ষীয় নক্ষত্র সৃষ্টি হয়েছে । নক্ষত্রকে ঘিরে থাকা অবশিষ্ট গ্যাস ও ধূলিকণার ঘনীভবনের ফলে গ্রহের সৃষ্টি। এরপর অভিজ্ঞান অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি যেমনঃ
-
একে গ্যাসীয় মেঘ কোথা থেকে এলো ?
-
এদের সৃষ্টি হয়েছিল কিভাবে ?
-
মহাবিশ্বের শুরু হয়েছিল কিভাবে ?
-
কিভাবে পদার্থের সৃষ্টি হয়েছে?
বেলজিয়ামের জ্যোতির্বিজ্ঞানী G. Lemaitre ১৯২৭ সালে একটি ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে। ১৫ শত কোটি বছর আগে মহাবিশ্বের সমস্ত বস্তু সংকুচিত অবস্থায় একটি বিন্দুর মত ছিল ।
ঠিক যেন একটি অতি পরমাণু । ১৫ শত কোটি বছর পূর্বে এই পরমাণুর মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে মহাবিশ্ব অভিরতভাবে সম্প্রসারিত হতে থাকে । এই বিস্ফোরণকে বলা হয় বিগব্যাং এবং সেই সময় থেকে মহাবিশ্বের সবকিছু অবিরাম পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে ।
সাধারণভাবে আমরা বলতে পারি সৃষ্টি দুই প্রকার । প্রথম নম্বর সৃষ্টি হল কোন কিছু ছাড়া নতুন কিছু তৈরি করা। এরূপ সৃষ্টি একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তার করতে পারেন । আর দ্বিতীয় নম্বর সৃষ্টি হল একটি জিনিস থেকে অন্য জিনিসে রূপান্তর করা । মানুষ সাধারণভাবে যেসব জিনিস তৈরি করে তা এরূপ নামান্তর ।
মহান সৃষ্টিকর্তা তার পবিত্র কিতাবে এরশাদ করেছেন
“ আমি ……… আসমান নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই তাকে সম্প্রসারণ করব । ”
বিজ্ঞানের এক চিন্তা ধারায় বলা হয়েছে যে । একটি বোমা বিস্ফোরণ করলে যেমন আগুনের ফুলকি চারদিকে ছড়িয়ে পরে । ঠিক তেমনি এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে এক মহা বিস্ফোরণের মাধ্যমে এবং বিস্ফোরণের সময় যেসব আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে গেছে সেগুলি নক্ষত্র পরিণত হয়েছে ।
অন্যদিকে পৃথিবীর অন্যতম জ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটন তার অমর গ্রন্থে “ FNPM “ তে তিনটি সূত্র বর্ণনা করেছেন যথাঃ
প্রথম
বাহ্যিক কোন বল প্রয়োগ না করা হলে স্থির বস্তুর স্ত্রী থাকবে এবং গতিশীল বস্তু শ্রুতিতে চলতে থাকবে।
দ্বিতীয়
বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন পরিবর্তনের হার এর ওপর প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর বেগের পরিবর্তন ও সেদিকে হবে ।
তৃতীয়
প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে ।
সাধারণ দৃষ্টিতে এই সূত্র তিনটি হলো নিউটনের গতিসূত্র নামে পরিচিত । তবে এই সূত্র তিনটি সর্বজনীন মানুষের সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধিতে যদি তারা চিন্তা করে এই সূত্র তিনটি প্রয়োগ করে তবে বিবেকবান মানুষ গুলো উপলব্ধি করতে পারবে তার সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কিছু জ্ঞান ।
অন্যদিকে এই সূত্র তিনটি যদি পজিটিভ ভাবে প্রয়োগ করা হয় তবে মানুষের ব্যক্তিগত পরিবারিক , সামাজিক , রাষ্ট্রীয় , অর্থনৈতিক , কূটনৈতিক ও ধর্মীয় সকল দিকে মানুষ সাফল্য অর্জন করতে পারবে ।
নিউটনের প্রথম সূত্র কে মহান সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা সম্পর্কে বিবরণ ব্যবহার করা যেতে পারে যদিও সমস্ত দুনিয়ার পানি যদি কলমের কালি হয় । সমস্ত গাছ যদি কলম হয় । এবং সকল মানুষ যদি মহান সৃষ্টিকর্তার ক্ষমতা সম্পর্কে লিখতে শুরু করে তবে তার ক্ষমতা সম্পর্কে লিখে শেষ করতে পারবে না । তবুও সেই রাজাদের ক্ষমতার সাগর থেকে নুড়ি পাথর পাওয়া ওকি কম মূল্যহিন নয় কি?
নিউটনের সূত্রানুসারে
বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করা হলে স্থির বস্তুর স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে চলতে থাকবে । যদি এটাই হয় তবে কোন শক্তিধর এই পৃথিবীটাকে তার কক্ষপথে ঘোরাচ্ছে। আমরা আধুনিক বিজ্ঞানের কল্যাণে জানতে পেরেছি যে এই মহাবিশ্ব একটি বিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে এবং এই বিস্ফোরণের মাধ্যমে মিল্কিওয়ের মত অসংখ্য ছায়াপথ তৈরি হয়েছে।
তবে জ্ঞানী মানুষ কি একটু চিন্তা করে না কোন মহা শক্তিধর রাজাধিরাজ এ বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে । দুনিয়ার কোন রাজ্য রাজা বাদশা বা কোন মহা শাসক বলেনি যে তিনি বা তারা এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছে । একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাসুল আলামিন তার পবিত্র কোরআন পাকে এরশাদ করেছেন যে ।
“আসমান দুনিয়া জামিনের মুখ বন্ধ ছিল অতঃপর আমি দুটিকে বিস্ফোরিত করেছি ।”
জ্যোতিবিদ্যা সম্পর্কে আল কোরআন এর আরো অনেক ব্যাখা আছে। কিন্তু কুরআনের তাৎপর্য এই কয়েকটি ব্যাখার মধ্যেই আমরা পেয়ে যাই।
Article By Syed Mominul Islam