কচু সবজিটি আমাদের সবার পরিচিত। অনেকেই ঠাট্টা করেও এই শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এর গুনাগুন জানলে আপনিও অবাক হবেন। কচুর পুষ্টিগুন সম্পর্কে আমরা এখানে আলোচনা করব। আমরা অন্য সবজিগুলোর প্রতি এতোটাই ঝুকে গেছি যে, এই কচু সবজিটি খাওয়া হয়না বললেই চলে। কিন্তু আমাদের এই পোস্টটি পড়ার পর আপনার এই কচুর প্রতি একটা আগ্রহ হবে।
কচু সবজি কোথায় পাওয়া যায়?
কচু সবজিটি বাংলাদেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। রাস্তার পাশে , বাড়ির আঙিনায় , বাগানে, মাঠে সবখানেই কচু পাওয়া যায়। এধরনের কচুই আমরা সবজি হিসেবে রান্না করে থাকি। অনেকেই খুব যত্নের সাথে কচুর চাষ করে থাকে। কচু ডাঙায় এবং পানিতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ডাঙায় দেখা যায়।
কচু কত ধরনের হয়ে থাকে?
আমরা বিভিন্ন ধরনের কচু দেখতে পাই। সবগুলো কচু দেখতে একই রকম হয়না। সব ধরনের কচু খাওয়ার উপযোগী নয়। যেমন বনে যেসকল কচু জন্মায় সেগুলোকে বুনো কচু বলে। এই কচু খাওয়া যায়না। অন্য সকল কচু প্রায়ই খাওয়ার উপযোগী । অন্য কচুগুলি হলো মুখিকচু, দুধকচু, মানকচু, পানিকচু, পঞ্চমুখিকচু ও ওলকচু উল্লেখযোগ্য।
কচুর পুষ্টিগুন
কচু এমন একটি সবজি যে সবজির কোনো অংশই ফেলা যায়না। কচুর ডাটা, কচুর শাক, কচুর মূল, কচুর লতি , কচুর মুখি এসব হলো কচুর অংশ। প্রত্যেক অংশই খাওয়া যায় এবং প্রত্যেকটার স্বাদও আলাদা। কচুর পষ্টিগুন অনেক।
কচুর মূল উপাদান হলো আয়রন (Fe), যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রেখে শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে ৩৯ গ্রাম প্রোটিন, ৬ দশমিক ৮ গ্রাম শর্করা, ১৫ গ্রাম চর্বি, ২২৭ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ১০ মিলিগ্রাম আয়রন ও ৫৬ মিলিগ্রাম খাদ্যশক্তি থাকে।
কচুশাক
কচুশাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এ রয়েছে। যা চোখের দৃষ্টিশক্তি ঠিক রাখতে সাহায্য করে। কচুশাক উচ্চ রক্তচাপ কমায়। কচুরশাকে থাকা স্যাপোনিনস, টেনিনস, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্লাভোনয়েড এসব উপাদান রক্তচাপ কমানোয় সাহায্য করে। কচুশাকে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি ও রয়েছে। যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কচুশাক পানি ঘাটতি পূরন করে। কচুরশাকে প্রচুর পরিমানে পানি থাকে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যপার হলো, অনেক পুষ্টিবিদদের মতামত পাওয়া যায় যে, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের কচুশাকেই তার ক্যালসিয়াম ও লৌহের চাহিদা মেটে যায়।
কচুর মূল
কচুর মূল অন্যতম একটি সবজি। কচু রক্তশূন্যতা পূরন করে। কচুতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে। কচুর ওল বা মূল কোলেস্টেরল কমায়। কচুতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে্ যা আমাদের দেহের জন্য খুবই উপকারি। যদি কোনো ব্যক্তি নিয়মিত কচু খায় তবে তার কোলন ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। কোনো জ্বরের রোগীকে যদি দুধ কচু খাওয়ানো হয় তবে ঐ রোগীর জ্বর খুব দ্রুতই কমে যায়।
কচুর লতি
কচুর লতিতে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এতে ক্যালসিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে, যা দেহের হাড় শক্ত করে ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করতে সক্ষম। খেলোয়ার , গর্ভবতি , কেমোথেরাপি নিচ্ছেন এমন রোগীদের জন্য কচুর লতি খুবই উপকারি একটি সবজি। সদ্য অপারেশন হওয়া রোগীদের খাবার হজমের জন্য কচু খুবই উপকারি একটি সবজি।
কচুর মুখি
কচুর মুখি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। এতে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, যেমন এ, সি ও বি থাকে। কচু মুখিতে এমন কিছু উপাদান থাকে যা বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর করে।
যাদের জন্য এই সবজি নয়:
যাদের এলার্জি আছে এবং যাদের অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে তাদের জন্য কচু না খাওয়ায় ভালো। কারন কচু খাওয়ার পর একটু জ্বালাপোড়া হতে পারে। কচু রান্নার পর লেবুর রস, ভিনেগার অথবা তেঁতুল গোলা পানি দিলে অপালেটের দানা দূর করা যায়। এছাড়া সবার জন্যই কচু সবজিটি গ্রহনযোগ্য । কচুর পুষ্টিগুন সম্পর্কে আশা করি সবারই ধারনা পেয়ে গেছেন। অনেক ধরনের রোগের জন্য কচু উপকারি। তাই ডাক্তার এর থেকে মুক্তি পেতে এসব সবজি নিয়মিত ক্ষেতে হবে।
thanks for share this information
welcome.