বর্তমান দুনিয়ার আংশিক কাজগুলোর দায়িত্ব গ্রহণ করেছে রোবট, যার মেইন বা কোর এলিমেন্ট হিসেবে কাজ করছে মাইক্রোচিপ, মাইক্রোকন্ট্রোলারস। এখন মনে হতে পারে যে এই মাইক্রোকন্ট্রোলার টা আবার কি? কিভাবেই বা এটি রোবট কে সহায়তা করে? আর কিভাবে এটা দিয়ে একটা রোবট তৈরি করা যায়।
রোবটিক্স নিয়ে জানার প্রথম পর্বে আমরা একটি রোবট কি? এটি তৈরি করার মূল উপকরন ইত্যাদি সম্পর্কে জানবো। এবং পরবর্তী পর্ব গুলো তে জানবো রোবট কিভাবে তৈরি করতে হয়? এবং দেখবো কিছু বাস্তব উদাহরন।
রোবট কি? রোবট কাকে বলে?
রোবটিক্স নিয়ে জানা – ১ম পর্ব
রোবট শব্দ কোথা থেকে এলো, বা কি এই শব্দটির উৎপত্তির রহস্য তা আমাদের আলোচ্য বিষয় না। এগুলো ইতিহাস আপনি চাইলে উইকি পিডিয়া হতে সংগ্রহ করে নিতে পারেন।
আচ্ছা, রোবট হলো কিছু বেসিক এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমপ্লেক্স ইলেক্ট্রনিক সার্কিট দ্বারা তৈরি সিস্টেম যা মানুষের দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, মেশিন বা রোবট সবসময় যে মানুষের কথা শুনে চলে তা না।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সি রোবটিক্স এর দুনিয়ায় এক বিপ্লব সংঘটিত করেছে। যার মাধ্যমে আপনার তৈরি করা রোবট টি নিউরাল নেটওয়ার্কিং ব্যবহার করে বিভিন্ন টেস্ট কেসের এর ডাটা এনালাইসিস করে নিজের কাজ বা মানুষের দেয়া কাজ নিজেই সম্পন্ন করতে পারে কোনো রকম মানুষের কন্ট্রোলিং ছাড়াই।
যাই হোক, আমরা রোবটিক্স নিয়ে জানা এই আর্টিকেল গুলোতে বেসিক রোবটিক্স নিয়ে আলোচোনা করার চেষ্টা করবো, কারন প্রথমেই আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কথা বার্তা বলা ঠিক হবে না, বিশেষ করে বিগিনার দের জন্য।
একটি রোবট প্রধান পার্টস কি কি?
রোবটের ব্রেইন হিসেবে যেহেতু একটি কম্পিউটার সিস্টেম কে ব্যবহার করা হয় তাই এটির কার্যপ্রণালিও কিছুটা কম্পিউটার এর মতো। একটি বেসিক রোবট ইনপুট – প্রসেস – আউটপুট সিস্টেম এ কাজ করে থাকে।
ইনপুটঃ
যে সকল কম্পোনেন্ট এর মাধ্যমে একটি রোবট পরিবেশ ও এর আশেপাশের অবস্থা বুঝতে বা অনুধাবন করতে পারে তাদের কে ইনপুট ডিভাইস বলে। ইনপুট কম্পনেন্ট গুলো পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের উপস্থিতি রোবটকে দেয় যেমনঃ
- সামনে থাকা কোনো বস্তু
- আলো
- শব্দ
- আগুন
- পানি
- গ্যাস
- ঘনত্ব
- তাপমাত্রা
- আদ্রতা
- দুরত্ব
- কম্পন ইত্যাদি
প্রসেসঃ
এই পর্যায়ে রোবট তার সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট দ্বারা ইনপুট ডিভাইস গুলো দ্বারা প্রাপ্ত ডেটা কে পড়তে ও বুঝতে পারে। এর মাধ্যমে সে বুঝতে পারে যেঃ
- সামনে থাকা বস্তু টি কি ধরনের
- কি পরিমাণ আলো আছে
- কি পরিমাণ শব্দ উৎপন্ন হচ্ছে
- পানি আছে কি নেই
- গ্যাস এর ঘনত্ব কত? এটা কি সঠিক ঘনত্ব নাকি মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর
- তাপমাত্রা পরিমাপ করতে ও বুঝতে পারে যে কত ডিগ্রি সেলসিয়াস বা কত ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা বর্তমানে পরিবেশে
- বাতাসের আদ্রতার পরিমাণ নির্ণয় করতে পারে
- একটি বস্তু কতো দুরত্বে অবস্থান করছে তা পরিমাপ করতে পারে ইনপুট ডিভাইস এর প্রাপ্ত ডাটা থেকে
- যে কোনো ধরনের কম্পনের মাত্রা নির্ণয় করতে পারে
আউটপুটঃ
প্রসেসর ডেটা প্রসেস করে আউটপুট ডিভাইস কে কমান্ড দেয় যে এখন কি করতে হবে। বিভিন্ন দরকার অনুযায়ী রোবটে বিভিন্ন ধরনের আউটপুট ডিভাইস ব্যবহার করা হয়। যেমনঃ
- চাকা যুক্ত মটর – চলাচল করার জন্য
- পানির পাম্প – আগুন নেভানোর কাজে
- সাধারন মোটর
- সার্ভো মোটর – নির্দিষ্ট কোণে মোটর এর পজিশন চেঞ্জ করতে
- ব্রাসলেস মটর ও প্রপেলার – ড্রোনের ক্ষেত্রে
- এল ই ডি লাইট – সংকেত বুঝানোর ক্ষেত্রে ইত্যাদি
মানবদেহের সঙ্গে রোবটের তুলনাঃ
- ধরুন, একটা বাড়িতে গ্যাস লিকেজ থেকে হঠাৎ আগুন ধরে গেলো এবং বাড়ির একজন সদস্য তা টের পেয়ে বাল্টি তে পানি নিয়ে মগ দিয়ে পানি ঢেলে আগুন টি নেভানোর চেষ্টা করলো।
- এখানে মানুষ প্রথমে গ্যাস এর গন্ধ পেয়ে আচ করতে পারলো যে গ্যাস লিক হচ্ছে। তার ব্রেইন তাকে গ্যাস বন্ধ করার জন্য সিগ্নাল দিলো। কিন্তু এরই মধ্যে আগুন লেগে গেলো এবং আগুনের ফলে বাতাসে ধোয়ার ঘনন্ত্ব বেড়ে গেলো ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলো।
- এসকল পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে মানুষ টি তার মস্তিষ্কের মাধ্যমে বুঝতে পারলো যে আগুন লেগেছে এবং সে তার হাত-পা ও পানির মাধ্যমে তা নেভানোর চেষ্টা করলো।
একই ব্যাপার টা যদি একটা অগ্নি নির্বাপক বা ফায়ার ব্রিগেড রোবট এর সাথে হতো তবে কেমন হতো,
- বাড়িতে থাকা রোবট টি তার ইনপুট ডিভাইস যাকে সেন্সর ও বলা হয় তার মাধ্যমে বাতাসে গ্যাসের ঘনত্ব টের পেতেই বাড়িতে থাকা সকলের কাছে গ্যাস লিকেজের ব্যাপারটি মোবাইল এ নোটিফিকেশন বা অটোমেটিক রোবটিক ভয়েস এর মাধ্যমের জানিয়ে দিতো। এতে সবাই সতর্কিত হয়ে যেত এবং গ্যাস লাইন টি বন্ধ করে দিতে পারতো।
- কোনো কারণে আগুন লেগে গেলেও রোবট তার Infrared Detector এর মাধ্যমে তা বুঝে যেতো এবং দ্রুত তার সাথে সেট করা পানির ট্যাংক হতে ওয়াটার পাম্প এর মাধ্যমে পানি দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলতো।
- এর মাধ্যমে যেমন মানুষের দরকার হলো না তেমনি একটি দুর্ঘটনার হাত থেকে বাড়ির সকলে রক্ষা পেলো।
আশা করি রোবট কি এবং তার কার্যকারিতা সম্পর্কে কিছু ধারনা পেয়েছেন। এর পরের পোস্টে বিভিন্ন ইনপুট, আউটপুট ডিভাইস এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – রোবটের ব্রেইন মাইক্রোকন্ট্রলার নিয়ে কথা বলবো।
যারা রোবটিক্স নিয়ে ইন্টারেস্টেড এবং ইতি মধ্যে যারা রোবটিক্স নিয়ে কাজ করেছেন তারা তাদের বাস্তবায়িত ও কল্পিত প্রজেক্ট গুলো কমেন্টে লিখে আমাদের জানান।
Written By
– Ilias Sami