মাথাব্যথা হলেই যে মাইগ্রেনের কথা বলি আসলেই কি তাই? সব মাথাব্যথা কি মাইগ্রেন? এর উত্তর হলো না। সব মাথাব্যথার কারণ মাইগ্রেন নয়। ধরুন কারো হাত কাটা গেল আমি কি বলে দিতে পারি যে হাত ছুরি দিয়ে কেটেছে? না আমি তা বলতে পারি না। কারণ হাত কাটার জন্য অনেক কিছুই হতে পারে । ঠিক তেমনি সব মাথাব্যথাকে মাইগ্রেশন বলতে পারি না। বর্তমানে সারাবিশ্বে ১০-১১ শতাংশ মানুষ মাইগ্রেন জটিল মাথা ব্যথায় ভুগছে। এখন আমরা মাথাব্যথা ও মাইগ্রেন কি তা জানব।
মাইগ্রেশন এর বাংলা নাম আধ কপালি। এর সমস্যা এই সমস্যাটি ২০ – ৫৫ বছর বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে উল্লেখযোগ্য হলো যে, মেয়েদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটি বেশি লক্ষণীয়। এ রোগের শুরু হয় ১৮ – ৩০ বছরের মধ্যে। যেকোনো লোকের এ সমস্যাটি হতে পারে।
একটি দিনকে ব্যাহতৃ করার জন্য মাইগ্রেন ব্যথাটি যথেষ্ট। কিন্তু মাথা ব্যথা অনেক কারণেই হতে পারে। যেমনঃ দৃষ্টিস্বল্পতা, টিউমার, মাথায় রক্তক্ষরণ ইত্যাদি কারণে। দুঃশ্চিন্তা, বিশ্রামের অভাব, ঠিকমতো ঘুম না হওয়া এগুলোর জন্য মাথাব্যথা হয়। এগুলো প্রাইমারি হেডেক বা মাথা ব্যথা। সাইনোসাইটিস, স্ট্রোক, মাথার আঘাতজনিত কারণে ব্যথা, ব্রেইন টিউমার এগুলো হলে হেডেক বা মাথা ব্যথা।
মাইগ্রেন কি ?
মাইগ্রেন হলো এক ধরনের বিশেষ মাথা ব্যথা যা সাধারণতঃ মাথার একসাথে একপাশে থেকে শুরু হয়। এটি সাধারণ মাথাব্যথা মত নয় এ ব্যথা অনেক তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। ব্যথাটি থেমে থেমে হয় মনে হয় যেন কেউ একজন মাথায় হাতুড়ি বা লাঠি দিয়ে অনবরত আঘাত করছে। আলো, শব্দ এবং শারীরিক কাজের ফলে এ ব্যথা বাড়ে। তাই রোগী অনেক ক্ষেত্রে রুমে অন্ধকারে অবস্থান করে।
ব্যথার তীব্রতা এতই হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে বমি হয়।
এ ব্যথা কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। ব্যথার ফলে মস্তিষ্কে বহিরাবরণে থাকা ধমনীগুলো স্থিত হয়ে ফুলে যায়।
মাইগ্রেন কাদের এবং কেন হয়?
মাইগ্রেনের কারণ এখন পুরোপুরি সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে অনেকের ধারণা মধ্যে এটি জিনগত বা বংশগত বা অজ্ঞাত কারণে হতে পারে। এই সমস্যাটি পুরুষের থেকে নারীদের ক্ষেত্রে বেশি লক্ষ্য করা যায়। যার অনুপাত পুরুষ : নারী =১:৫।
অতিরিক্ত চকলেট, কফি, পনির খাওয়া, জন্ম বিরতিকরন ঔষধ, দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত ব্যায়াম, পরিশ্রম, অনিদ্রা, একটানা অনেক সময় যাবত টিভি দেখা ইত্যাদি কারণে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এছাড়া মানসিক চাপ। কোষ্ঠকাঠিন্য এসবই থেকেও মাইগ্রেনের মাথাব্যথা হতে পারে। মেয়েদের পিরিয়ডের সময় এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
মাইগ্রেনের লক্ষন : মাইগ্রেনের লক্ষন দুই ধরনের হতে পারে। একটি হলো সাধারন মাইগ্রেনের লক্ষন অপরটি হলো ক্ল্যাসিক্যাল মাইগ্রেনের লক্ষন। সাধারন মাইগ্রেনে মাথাব্যথা, বমি ভাব এদুটি লক্ষনই প্রকাশ পায়। শুরুর দিকে মাথার একদিক থেকে ব্যথা শুরু হয় । পরে সময়ের সাথে সাথে তা সম্পূর্ন মাথায় ছড়িয়ে পড়ে।
ক্ল্যাসিক্ল্যাল মাইগ্রেনে সাধারনত চোখের বা দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা হয়। চোখে ঝাপসা দেখা , হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাওয়া, যেকোনো জিনিস হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া। এসব শুরুর আনুমানিক ২০ মিনিট পর মাথাব্যথা শুরু হয় এবং বমি ভাবও হতে পারে। যদি চোখের সমস্যা অনেকক্ষন স্থায়ি হয় তবে ধরে নিতে হবে এটি মাইগ্রেন নয়।
মাইগ্রেন মাথাব্যথা থেকে বাচার উপায় : মাইগ্রেন এর সঠিক চিকিৎসা এখনো সঠিক ভাবে জানা যায়নি। কিন্তু কিছু নিয়ম-কানুন মানলে এব্যথা অনেকটাই কমে যায়। যেমন:
- প্রতিদিন পরিমিত ঘুম হতে হবে।
- একদম কম বা অনেক বেশি আলোতে কাজ করা থেকে বিরত থাকা।
- তীব্র ঠান্ডা খাবার থেকে বিরত থাকা।
- অধিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকা।
- অধিক শব্দ এবং কোলাহলপূর্ন স্থানে না যাওয়া।
- ব্যথা যদি শুরু হয়ে যায় তবে প্রচুর পানি পান করা এবং বিশ্রাম করা।
- ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধি।
- আদার টুকরা, তিল , আটা , বিট , সবুজ রঙের শাক-সবজি বেশি পরিমানে খাওয়া।
মাইগ্রেনের ব্যথা থাকলে কোন কোন খাবার থেকে বিরত থাকবেন:
- অধিক পরিমানে চা, কফি ও ঠান্ডা কোমল পানীয় এসব থেকে বিরত থাকা ।
- অতিরিক্ত পেঁয়াজ, পাস্তা , বেড,টমেটো, এসব খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা ।
তবে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে এসব খাবারে সমস্যা নাও হতে পারে। ব্যাথা যদি এক সপ্তাহের বেশি যাবত হয়ে থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে।
Good