১ম পর্ব
“পুতুল”
**ফ্লোরা আর জেফার একটি বাড়ির সামনে এসে তাদের গাড়ি থামালো। “২৭নং গলির ১৩ নম্বর পুতুল ভিলা” বাড়িটাকে অদ্ভুতুরে বলাই চলে। নামটাও কেমন অদ্ভুত। ফ্লোরা অতিকল্পনাপ্রবণ মন আবার নাড়া দিয়ে ওঠলো।
“আনলাকি ১৩” – ধীর গলায় ফ্লোরা বললো।
“তুমি আবার শুরু করলে তো। ফ্লোরা তোমাকে কতোবার বলেছি এইসব হরর সিনেমাগুলো শুধুই আলোকসজ্জা। এগুলার কোনো বাস্তবতা নাই আর আনলাকি ১৩ বলে কিছু নাই” – একটু রাগী গলায়ই বললো জেফার।
এবার একটু শান্ত ও দরদী গলায় বললো,”ফ্লোরা, মিস্টার রিচার্ডরা নিশ্চয়ই ভালো মানুষ। আর তাদের মেয়ে রিদ্রাও নিশ্চয়ই মিষ্টি আর পুতুলের মতোই দেখতে “।
*জেফার ও ফ্লোরা নবদম্পতি। ফ্লোরা ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছে। জেফার চেয়েছিলো কিন্তু ফ্লোরা আর পড়াশোনা করতে চায় নি। জেফার দেশের স্বনামধন্য একটি এনজিওতে ভালো পজিশনে চাকরি করে। মোটা অংকের বেতন পায় তাই আর্থিক কোনো কষ্ট নেই তাদের।
তবে এনজিওর কাজ হলো অসহায় মানুষের সেবা করা তাই যখন তখন বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় জেফারকে। মাঝেমধ্যে রাতে বাহিরে থাকতে হয়। দিনে নানান কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেও রাতে একা থাকতে ফ্লোরার একটু বেশি অস্বস্তি লাগে।
তাই বিজ্ঞাপনটা দেখে সিদ্ধান্ত নেয় বেবিসিটিংয়ের কাজটা করবে ফ্লোরা।
কল করার সাথে সাথেই চাকরিটা হয়ে যায় তার। আজ জেফারের রাতে একটু শহরের বাহিরে যেতে হবে তাই যাওয়ার আগে ফ্লোরাকে পৌঁছে দিয়ে যাবে তার (ফ্লোরা)চাকরিতে।
*”কি হলো নামো” – তাগাদা দিলো জেফার।
“নয়টা তো ছুঁই ছুঁই আর বেশি দেরি করা ঠিক না” “আর হ্যা তুমি আবার চিন্তা করতে বসো না। কোনো সমস্যা হবে না। আর যদি তেমন কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমাকে জানাবে” – বললো জেফার।
মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো ফ্লোরা।
জেফার তাকে(ফ্লোরা) নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো জেফারের চলে যাওয়া
গাড়ির আলোর দিকে। তারপর ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে লোহার গেইটে ধাক্কা দিয়ে খুললো।
ফ্লোরা যেমনটা ভেবেছিলো ঠিক বিপরীত একটা পরিবেশ। মফস্বল শহরে মিস্টার রিচার্ডের বাড়ি। মেইন শহর থেকে মুটামুটি অনেকটা দূরে। বাড়িটার চারপাশে আগাছায় ভর্তি। বাড়িটাও পুরানো।
দুতলা বাড়িটির বারান্দায় দাঁড়াতেই কাঠের মেঝে মচমচ করে উঠলো।
ফ্লোরার এসব চিন্তার মাঝে হঠাৎ করেই আকাশের চাঁদের আলো নিভে গেলো। আকাশ ভয়ংকর রূপ নিলো। জোরে জোরে বাজ পড়তে লাগলো।
ফ্লোরা ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো তারপর নিজেকে নিজেই বলতে লাগলো,”একটা বাচ্চা মেয়েকে সঙ্গ দিতে হবে আমাকে। টিভি দেখা,খেলনা নিয়ে খেলা,গল্প শোনানো এই তো “।
নিজেকে শান্ত করে দরজার পাশে লাগানো কলিংবেলের সুইচে চাপ দিতেই বিচ্ছিরি এক আওয়াজে বাড়িটা কেঁপে উঠল। বাড়ির সাথে সাথে বাড়ির সবকিছুই অদ্ভুত মনে হলো ফ্লোরার। এই বুঝি তার মনে হলো এক ভয়ংকর দেখতে কেউ দরজা খুলবে। তবে তাকে অবাক করে দিয়ে একজন সুন্দরী হাসিমুখী মহিলা দরজা খুললো।
” ভিতরে আসুন,!! আপনি নিশ্চয়ই রিদ্রার নুতন বেবিসিটার?” হাসি মুখে মহিলাটি জিজ্ঞাসা করলো।
“হ্যা আমিই” – জোরে শ্বাস ছেড়ে বললো ফ্লোরা।
“একদম ঠিক সময়ে এসেছেন। আমরা এখনি বের হবো। আমি আর রিদ্রার বাবা একটা দাওয়াতে যাবো। সম্ভবত আজ রাতে ফিরবো না। “
ফ্লোরা ধীর পায়ে ভিতরে ঢুকলো। সে বাহির থেকে যেমনটা ভেবেছিলো বাড়ির ভিতরটা আরো বড়। বিশাল বসার ঘর। ভারি পুরাতন আসবাবপত্র দিয়ে ঠাসা। দেয়ালে ঝুলছে হাতে আকাঁ কিছু ছবি। ছবির মানুষ গুলো যেনো গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ছবিগুলো নিশ্চয়ই রিদ্রার দাদা, দাদার দাদাদের ছবি – ভাবলো ফ্লোরা।
রিদ্রা দাঁড়ানো ঘরের ঠিক মাঝখানে। বেশ মিষ্টি চেহারা ঠিক যেমনটা ভেবেছিলো সে (ফ্লোরা)।লম্বা চুল পিঠ ছড়িয়ে পড়েছে। মায়াবী চেহারা। বড় বড় চোখ। এতো বড় চোখ কারো দেখেছে বলে মনে হলো না তার। রিদ্রার হাতে একটা খেলনা কুকুর তবে দেখতে কিছুটা অদ্ভুত।
“তুমি নিশ্চয়ই রিদ্রা”, হেসে বললো ফ্লোরা।
” আমি ফ্লোরা। আমাকে ফারা আপু বলে ডেকো তুমি।”
“বাহ, তুমি তো খুব সুন্দরী। একদম পুতুলের মতো দেখতে। তোমাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে “- রিদ্রা বললো।
মেয়েটায় কথায় কেমন যেনো আৎকে উঠলো ফ্লোরা। কথাটা একটু অদ্ভুত শুনালো তার কাছে। শুরু থেকেই সবকিছু অদ্ভুত মনে হচ্ছে। ফ্লোরা ভাবতে থাকে,”এই বাড়িতে আরো অদ্ভুতুরে ব্যাপার দেখতে হবে নিশ্চয়ই “।
“তবে মেয়েটি আমাকে পছন্দ করেছে তাই সময় কাটাতে বিরক্ত লাগবে না” – মনে মনে বললো সে(ফ্লোরা)।
“এটা কি?” – রিদ্রার দিকে তাকিয়ে বললো সে।
“ঘেউঘেউ। “
“ওহ, ওর নাম ঘেউঘেউ বুঝি। দেও তো দেখি।”
হাতে ধরা খেলনাটা ফ্লোরার দিকে এগিয়ে দিলো রিদ্রা।
ছোট একটা কুকুর তবে মনে হয় যেনো জীবন্ত। যেনো এখনি চলতে শুরু করবে। হঠাৎ ফ্লোরার মনে হলো,,,!!
চলবে,,…………….
# ১ম পর্ব।
………………………………………………………….